‘রোমিং চার্জ’-এর হাত থেকে মুক্তি। আর দেশের যে কোনও প্রান্তেই নম্বর এক রেখে মোবাইল পরিষেবা সংস্থা বদলে ফেলার সুবিধা। স্পেকট্রাম বণ্টনে স্বচ্ছতা আনার পাশাপাশি গ্রাহকদের এই দুই সুবিধা দেওয়ার কথা মাথায় রেখেই নয়া খসড়া টেলিকম নীতি প্রকাশ করল কেন্দ্র। সোমবার কেন্দ্রীয় টেলিকম ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী কপিল সিব্বল জানান, আগামী দিনে ‘এক দেশ-এক লাইসেন্স’ পদ্ধতি চালুর মাধ্যমেই এই নয়া নীতি প্রণয়ন করতে চান তাঁরা। তার আগে এই খসড়া টেলিকম নীতির বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ট্রাই-এর মতামত জানতে চাইবে সিব্বলের মন্ত্রক। তবে এই সব ধাপ পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত কবে এই নীতি চালু হবে, তা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি তিনি। এই খসড়া টেলিকম নীতিকে অবশ্য সার্বিক ভাবে স্বাগত জানিয়েছে মোবাইল পরিষেবা সংস্থাগুলির সংগঠন সেলুলার অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া (সিওএআই)। তবে ‘এক দেশ-এক লাইসেন্স’ পদ্ধতি ঠিক কী ভাবে চালু হবে, সে বিষয়ে এখনও ধোঁয়াশা রয়েছে বলে মনে করছে তারা। বর্তমানে সাধারণত রাজ্যের বাইরে পা বাড়ালেই (পশ্চিমবঙ্গ থেকে সিকিম বা আন্দামান গেলে নয়) ‘রোমিং চার্জ’ বাবদ অতিরিক্ত মাসুল গুনতে বাধ্য হন গ্রাহক। যেমন ধরা যাক, কলকাতার মোবাইল নম্বর নিয়ে দিল্লি গেলেন কেউ। তা হলে দিল্লিতে বসে কলকাতা থেকে আসা কোনও ফোন ধরতে এসটিডি মাসুল গুণতে হবে তাঁকে। একই ভাবে, কলকাতায় কোনও ফোন করতেও, ওই একই টাকা খরচ করতে বাধ্য হন তিনি। নতুন নিয়ম চালু হলে, এই ‘রোমিং চার্জ’ আর থাকবে না বলেই সিব্বলের দাবি। |
এখন এক রাজ্যের মধ্যে হওয়া সত্ত্বেও কলকাতায় (কলকাতা সার্কেল) এসে ‘নম্বর পোর্টেবিলিটি’-র সুবিধা নিতে পারেন না বর্ধমান (ওয়েস্ট বেঙ্গল সার্কেল)-এর কোনও গ্রাহক। কিন্তু নয়া নীতি চালু হলে, এক রাজ্যে তো বটেই, মুম্বই কিংবা দিল্লি গিয়েও নম্বর এক রাখার সুযোগ পাবেন এ রাজ্যের কোনও গ্রাহক।
সিওএআই-এর ডিরেক্টর জেনারেল আর এস ম্যাথুজ অবশ্য মনে করেন, “বিষয়গুলি জটিল। এগুলি কবে থেকে বা কী ভাবে কার্যকর হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।” কারণ হিসেবে তিনি জানান, আমেরিকায় সংস্থাগুলি সারা দেশেই পরিষেবা দেওয়ার জন্য লাইসেন্স পায়। ফলে সেখানে ফোনের মাসুল দেশ জুড়ে একই থাকে। কিন্তু ভারতে ২২টি সার্কেলেই মোবাইল পরিষেবা দেওয়ার জন্য কোনও সংস্থার একক লাইসেন্স নেই। তাই এই পরিস্থিতিতে রোমিং চার্জ তুলে দিতে হলে সংস্থাগুলিকেও দেশ জুড়ে পরিষেবার লাইসেন্স দিতে হবে। কী ভাবে তা করা হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। অবশ্য কেন্দ্র যে এ বার ‘এক দেশ-এক লাইসেন্স’ নীতি চালুর পথে হাঁটবে, সেই ইঙ্গিত এ দিন দিয়েছেন সিব্বল।
টু-জি কেলেঙ্কারি নিয়ে জেরবার কেন্দ্র যে এ বার বিষয়টিতে স্বচ্ছতা আনতে বদ্ধপরিকর, তা এ দিন স্পষ্ট করে দিয়েছেন সিব্বল। তিনি জানান, নয়া প্রস্তাব অনুযায়ী, এখন থেকে স্পেকট্রামের দাম সব সময় নির্ধারণ করবে বাজারই। ‘অডিট’ করা হবে তার বণ্টন ও ব্যবহারের প্রক্রিয়া। আগেকার মতো আর লাইসেন্স দেওয়ার সময় তার সঙ্গে স্পেকট্রাম সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হবে না। এমনকী শুধুমাত্র বাজেট ঘাটতি পুষিয়ে দিতে চলতি অর্থবর্ষে ফের এক দফা স্পেকট্রাম নিলামের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। জানিয়েছেন, আরও ৩০০ মেগাহার্ৎজ স্পেকট্রাম বণ্টন করা হবে ২০১৭ সাল নাগাদ। ২০২০-তে আরও ২০০ মেগাহার্ৎজ। ম্যাথুজ-ও জানিয়েছেন, “এ বার খসড়া নীতি তৈরির আগে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী সব পক্ষের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা করেছিলেন। মোবাইল পরিষেবা সংস্থার পাশাপাশি যন্ত্র নির্মাতা, গ্রাহক-সহ সব পক্ষের মতামতই আলাদা করে শুনেছিলেন তাঁরা। নতুন নীতি তৈরির ক্ষেত্রে এ বিষয়ে যথেষ্ট স্বচ্ছতা বজায় রাখা হয়েছে।”
নতুন টেলিকম নীতির ক্ষেত্রে আরও কিছু ব্যবস্থা রাখতে চায় কেন্দ্র। যেমন একে অন্যের নেটওয়ার্ক ব্যবহার কিংবা প্রয়োজনে নিজের নেটওয়ার্ক বিক্রির পথ সুগম করার কথাও ভাবছে তারা। খুলে দেওয়া হতে পারে এই ব্যবসা ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার দরজাও। যাতে লোকসানের চাপ নিয়ে টিকে থাকার দায় থেকে মুক্তি পায় সংস্থাগুলি। সরকারের ধারণা, এর ফলে কিছু সংস্থা এই ব্যবসা থেকে বেরিয়ে যাবে। বাজারে প্রতিযোগিতা কমবে। বাড়বে টিকে যাওয়া সংস্থাগুলির আয়ের বহরও।
এ দিন এই খসড়া নীতি নিয়ে অবশ্য আলাদা ভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে চায়নি মোবাইল পরিষেবা সংস্থাগুলি। নীতির বয়ান খতিয়ে দেখার পর তারা এ নিয়ে মন্তব্য করবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।